বিড়াল অনেকের প্রিয় পোষ্য প্রাণী। তাদের মিষ্টি মিউ আওয়াজ, খেলাধুলার মজার কাণ্ড, এবং কৌতূহলী স্বভাব আমাদের মন কে জয় করে নেয়। তাই তাদের প্রতি আমাদের প্রকট ভালোবাসা থাকে।
বিড়াল সাধারণত খাবার খেতে পছন্ধ করে, তবে তারা যখন হঠাৎ করে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়, আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। কেননা, এটি মারাত্মক হতে পারে।
আপনার প্রিয় প্রাণীটির খাবার না খাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, আপনাকে কি কারনে বিড়াল খাচ্ছে না সেটি বের করে নিতে হবে। তারপর এর সমাধান করতে হবে।
এই আর্টিকেলে, আমরা বিড়ালের খাবার না খাওয়ার বিভিন্ন কারণ এবং এর সমাধান নিয়ে আলোচনা করব।
বিঃ দ্রঃ এই আর্টিকেল চিকিৎসা সম্পর্কিত কোন টিপস প্রদান করে না, চিকিৎসার জন্য পশু ডাক্তার এর সহযোগিতা নিতে হবে।
নিচে আপনার পোষা প্রাণীটির খাবারের প্রতি অনীহার কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হল।
বিড়াল যদি হঠাৎ করে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয় তবে সেটা কোন শারীরিক অসুস্থতার কারণে হতে পারে। মুখে বা দাঁতের সমস্যা, গ্যাস্ট্রাইটিস, কিডনি সমস্যা, সংক্রমণ, বা হেপাটিক লিপিডোসিসের মতো রোগ হতে পারে।
বিড়ালের দাঁতের সমস্যা যেমন দাঁতে পোকা ধরা, দাঁতে ফাঁক, মাড়ির রোগ, ইত্যাদি কারণে তারা খাবার খেতে পারে না। এছাড়াও, গ্যাস্ট্রাইটিস, কিডনি রোগ, এবং হেপাটিক লিপিডোসিসের মতো শারীরিক অসুস্থতাগুলি খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমিয়ে দিতে পারে।
বিড়ালরা খুবই সংবেদনশীল প্রাণী এবং তাদের চারপাশের পরিবর্তনে তারা দ্রুত প্রভাবিত হয়। নতুন পরিবেশে স্থানান্তর, নতুন লোক, নতুন পোষা প্রাণী, শব্দের তীব্রতা বৃদ্ধি, বা পরিচিত জিনিসপত্রের অভাব ইত্যাদির কারণে বিড়াল চাপ অনুভব করতে পারে।
চাপের ফলে তারা খাওয়া বন্ধ করতে পারে, বমি করতে পারে, বা ডায়রিয়া হতে পারে। নতুন বাসস্থানে বিড়ালরা নিরাপদ বোধ নাও করতে পারে, যার ফলে তারা লুকিয়ে থাকে এবং খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
নতুন ধরনের খাবার দিলে বিড়ালরা তা পছন্দ নাও করতে পারে। বিড়ালের স্বাদ এবং ঘ্রাণ সম্পর্কে খুবই সংবেদনশীল, তাই নতুন বা অপরিচিত খাবার তারা সহজে গ্রহণ করে না।
বাজার থেকে কেনা পশু খাদ্যে অনেক সময় গুণগত মান ঠিক থাকে না। নষ্ট, এক্সপায়ার্ড, কউন্টারফিট বা নকল পশু খ্যদ্যের কারনে, বিড়াল খাবারটির প্রতি অনীহা প্রকাশ করে। কেননা এই সব খাবার গ্যাস্টিক, পেটে প্রদাহ ইত্যাদির কারণ হতে পারে।
আস্থা রাখুন, আরোগ্য পেট স্টোরে, আমারা নিশ্চয়তা দিচ্ছি অরিজিনাল পশু খাদ্যের, বিস্তারিত জানতে আমাদের পেট স্টোর ভিজিট করুন।
বিভিন্ন কারণে বিড়াল স্ট্রেসে পড়তে পারে, যেমন বাড়ির পরিবেশে অশান্তি, বেশিক্ষণ একা থাকা, উচ্চ শব্দ, বা অন্য কোন পোষ্য দ্বারা বিরক্ত হওয়া।
স্ট্রেসের কারণে বিড়ালের খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায় এবং তারা খাবার খেতে পারে না।
বিড়াল যখন চাপে থাকে তখন তারা বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। লোম টেনে ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি, তারা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলিও প্রদর্শন করতে পারে:
আপনার বিড়াল যদি লোম টেনে ছিঁড়ে ফেলে বা অন্যান্য চাপের লক্ষণগুলি প্রদর্শন করে তবে পশুচিকিত্সকের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। পশুচিকিত্সক চাপের উৎস নির্ধারণ করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা সুপারিশ করতে সক্ষম হবেন।
ঠিক মানুষের মতো, বিড়ালদেরও সুস্থ থাকতে পুষ্টিকর এবং উচ্চমানের খাবারের প্রয়োজন। আপনার বিড়ালের খাবারের মান বোঝার জন্য কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। প্রথমে, বিড়ালের খাবারের উপাদানগুলো পরীক্ষা করুন। বিড়ালরা বাধ্যতামূলক মাংসাশী প্রাণী, তাই তাদের খাবারে কমপক্ষে ৩০% প্রোটিন থাকা জরুরি। শক্তির জন্য ১০% থেকে ২০% চর্বি দরকার, আর কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ১০% এর নিচে রাখাই ভালো। এছাড়াও, খাবারে ভিটামিন ও মিনারেলের মিশ্রণ থাকা উচিত।
দ্বিতীয়ত, খাবারের নিরাপত্তা যাচাই করুন। খাবারটি মানুষের খাবারের উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছে কিনা এবং কোনো কৃত্রিম রং বা স্বাদ আছে কিনা তা লক্ষ্য করুন। উচ্চমানের বিড়ালের খাবার নিরাপদ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এছাড়া, বিড়ালরা খাবারের ব্যাপারে বেশ নির্বাচনশীল, তাই তাদের পছন্দমতো স্বাদু খাবার কিনুন।
বিড়াল যদি ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে খাবার না খায় তবে ভেটেরিনারির সাথে দ্রুত পরামর্শ করুন। কারণ দীর্ঘ সময় না খেলে তাদের লিভারে সমস্যা হতে পারে যা ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (হেপাটিক লিপিডোসিস) নামে পরিচিত। এই অবস্থাটি বিড়ালের জন্য জীবন হুমকি হতে পারে।
ভেটেরিনারি ডাক্তার বিড়ালের শারীরিক পরীক্ষা করে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করে সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
বিড়ালের আচরণ লক্ষ্য করুন। তাদের অন্যান্য উপসর্গ যেমন বমি, ডায়রিয়া, নিস্তেজতা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি আছে কিনা তা খেয়াল করুন। যদি এই ধরনের উপসর্গ থাকে তবে তাৎক্ষণিকভাবে ভেটেরিনারির সাথে যোগাযোগ করুন।
বিড়ালের প্রিয় খাবার দিন। যদি সেগুলোও না খায় তবে চেষ্টা করুন বিভিন্ন ধরণের খাবার। কিছু বিড়াল টুনা মাছ, ক্যানড খাবার, বা চিকেন ব্রথ পছন্দ করে। এই ধরনের খাবার তাদের আকর্ষণ করতে পারে এবং তারা খাওয়ার ইচ্ছা পেতে পারে।
বিড়ালের খাবার আকর্ষণীয় করতে পারেন। গরম খাবার দিলে বিড়ালের আকর্ষণ বাড়তে পারে কারণ গরম খাবারের গন্ধ বেশি তীব্র হয়। এছাড়াও, বিভিন্ন স্বাদ এবং গন্ধের খাবার মিশিয়ে দিতে পারেন যা বিড়ালকে আকৃষ্ট করতে পারে।
খেলাধুলার মাধ্যমে বিড়ালকে উৎসাহিত করুন। তাদের সাথে খেলা করলে তারা আনন্দিত হয়ে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা পেতে পারে। খেলাধুলা বিড়ালের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং তাদের শারীরিকভাবে সক্রিয় রাখে।
বিড়ালের চারপাশের পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন। তাদের জন্য শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ একটি জায়গা তৈরি করুন যেখানে তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারে। বিড়ালের আরামদায়ক বিছানা, খেলনা, এবং সান্ধ্য পরিবেশ প্রদান করতে পারেন যা তাদের মানসিকভাবে সুখী রাখতে সাহায্য করবে।
বিড়ালের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। নিয়মিত ভ্যাকসিনেশন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। বিড়ালের স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে নিয়মিতভাবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত।
বিড়ালের খাবারের মান নিশ্চিত করুন। খাবার সবসময় তাজা এবং পুষ্টিকর হতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার কখনই বিড়ালকে খেতে দিবেন না এবং খাবার রাখার সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখুন।
বিড়ালের খাবারের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দিলে বিড়াল নিয়মিতভাবে খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবে। এছাড়াও, একসঙ্গে বেশিরভাগ খাবার না দিয়ে ছোট ছোট পরিমাণে খাবার দিন যা তাদের খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে পারে।
বিড়ালের জন্য পরিষ্কার পানি সবসময় রাখতে হবে। পানির অভাবেও বিড়াল অসুস্থ হতে পারে এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ হারাতে পারে।
বিড়ালের জন্য পুষ্টিকর খাবার প্রদান করুন যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। পুষ্টিকর খাবার বিড়ালের শরীরের সঠিক বিকাশ ও রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে এবং তাদের সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে।
বিড়ালের খাবার না খাওয়ার সমস্যাটি গুরুতর হতে পারে এবং এর সঠিক সমাধান জানা প্রয়োজন। যদি আপনার বিড়াল খাবার না খায় তবে দেরি না করে ভেটেরিনারির সাথে যোগাযোগ করুন। তাদের সুস্থতা ও সুখ নিশ্চিত করতে আমাদের সজাগ থাকা উচিত। বিড়াল আমাদের পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাদের প্রতি আমাদের যত্ন ও ভালোবাসা অবশ্যই প্রদান করা উচিত। তাদের সঠিক যত্ন ও সঠিক খাবার প্রদান করে আমরা তাদের সুস্থ ও সুখী রাখতে পারি।
প্রশ্নঃ আমার বিড়াল হঠাৎ করে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, কী করতে পারি?
উত্তরঃ বিড়াল যদি হঠাৎ করে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয় তবে প্রথমেই ভেটেরিনারির সাথে যোগাযোগ করুন। এটা কোনো গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। তাদের শারীরিক পরীক্ষা করে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা হবে।
প্রশ্নঃ বিড়াল কতক্ষণ না খেলে সমস্যা হতে পারে?
উত্তরঃ বিড়াল যদি ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে খাবার না খায় তবে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। দীর্ঘ সময় না খেলে তাদের লিভারে সমস্যা হতে পারে যা হেপাটিক লিপিডোসিস নামে পরিচিত।
প্রশ্নঃ বিড়াল যদি নতুন খাবার না খায় তবে কী করতে হবে?
উত্তরঃ বিড়াল নতুন খাবার না খেলে প্রথমে পুরানো খাবারের সাথে নতুন খাবার মিশিয়ে দিন। ধীরে ধীরে নতুন খাবারের পরিমাণ বাড়ান। এতে করে বিড়াল সহজে নতুন খাবার গ্রহণ করতে পারে।
প্রশ্নঃ বিড়ালের খাবার পরিবর্তন করার সময় কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে?
উত্তরঃ খাবার পরিবর্তনের সময় ধীরে ধীরে নতুন খাবারের সাথে পরিচয় করান। প্রথমে পুরানো খাবারের সাথে নতুন খাবার মিশিয়ে দিন এবং ধীরে ধীরে নতুন খাবারের পরিমাণ বাড়ান। এতে বিড়ালের হজমের সমস্যা কম হবে।
প্রশ্নঃ বিড়াল যদি বারবার খাবার ফেলে দেয়, কী করতে হবে?
উত্তরঃ বিড়াল যদি বারবার খাবার ফেলে দেয় তবে খাবারের মান এবং স্বাদ পরীক্ষা করুন। খাবারটি তাজা এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ কিনা তা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজন হলে ভেটেরিনারির সাথে পরামর্শ করুন।
0
0