মানবদেহের রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। মানুষের রক্তের গ্রুপ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যা নির্ভর করে রক্তের মধ্যে উপস্থিত বিশেষ প্রোটিন এবং অ্যান্টিজেনের ওপর। এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো রক্তের গ্রুপ কয়টি এবং প্রতিটি গ্রুপের বৈশিষ্ট্য ও কিভাবে নির্ণয় করা হয়।
ব্লাড গ্রুপ হলো এক ধরনের শ্রেণীবিন্যাস, যা রক্তের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিজেনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। রক্তের এই অ্যান্টিজেনগুলো প্রধানত লোহিত রক্তকণিকার প্লাজমা মেমব্রেনে থাকে। Antigen ও Antibody এর ভিত্তিতে মানুষের রক্তের গ্রুপ চার ভাগে বিভক্ত। যেমন A, B, AB, এবং O। প্রতিটি গ্রুপ আবার পজিটিভ (+) বা নেগেটিভ (-) Rh ফ্যাক্টর দ্বারা বিভক্ত, যা রক্তদান ও গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়।
মানুষের রক্তের গ্রুপ প্রধানত চারটি ভাগে বিভক্ত, যা ABO শ্রেণীবিন্যাস নামে পরিচিত। এই শ্রেণীবিন্যাস নির্ধারণ করা হয় রক্তের লোহিত কণিকা (রেড ব্লাড সেল)-এ উপস্থিত বিশেষ ধরনের প্রোটিন, যা অ্যান্টিজেন নামে পরিচিত, এবং প্লাজমায় থাকা আণ্টিবডির উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। এছাড়া, Rh ফ্যাক্টর বা রেসাস ফ্যাক্টর (পজিটিভ বা নেগেটিভ) এর মাধ্যমে রক্তের গ্রুপ পৃথক করা হয়। নিচে প্রতিটি গ্রুপ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
A গ্রুপের মানুষের লোহিত কণিকায় A অ্যান্টিজেন থাকে এবং তাদের প্লাজমায় B আন্টিবডি থাকে। এই গ্রুপের মানুষদের শুধুমাত্র A অথবা O গ্রুপের রক্ত দেওয়া যায়। Rh ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে এই গ্রুপ পজিটিভ বা নেগেটিভ হয়।
B গ্রুপের মানুষের লোহিত কণিকায় B অ্যান্টিজেন থাকে এবং তাদের প্লাজমায় A আন্টিবডি থাকে। এই গ্রুপের মানুষেরা B অথবা O গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারেন। Rh ফ্যাক্টর এই গ্রুপকেও পজিটিভ বা নেগেটিভ হিসেবে আলাদা করে।
AB গ্রুপের মানুষের লোহিত কণিকায় A এবং B উভয় অ্যান্টিজেন থাকে এবং কোনো আন্টিবডি থাকে না। এই কারণে AB গ্রুপকে "সার্বজনীন গ্রহীতা" বলা হয়। তারা যেকোনো গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারেন। তবে AB ব্লাড গ্রুপের মানুষ শুধুমাত্র AB ব্লাড গ্রুপের মানুষকেই রক্ত দিতে পারেন। AB গ্রুপের মানুষদেরও Rh ফ্যাক্টর পজিটিভ বা নেগেটিভ হয়।
O গ্রুপের মানুষের লোহিত কণিকায় কোনো অ্যান্টিজেন থাকে না, তবে তাদের প্লাজমায় A এবং B উভয় ধরনের আন্টিবডি থাকে। এই কারণে O গ্রুপকে "সার্বজনীন দাতা" বলা হয়, কারণ তারা যেকোনো রক্তের গ্রুপের মানুষকে রক্ত দিতে পারেন। Rh ফ্যাক্টর অনুযায়ী O গ্রুপের রক্ত পজিটিভ বা নেগেটিভ হয়ে থাকে।
Rh ফ্যাক্টর বা রেসাস ফ্যাক্টর একটি বিশেষ এন্টিজেন যা প্রোটিন কমপ্লেক্স এর অংশ হিসেবে প্রকাশ করা হয়, যা রক্তের লোহিত কণিকার বাইরে থাকে। যদি এই প্রোটিন উপস্থিত থাকে, তাহলে রক্ত পজিটিভ হিসেবে চিহ্নিত হয়, আর যদি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে নেগেটিভ হিসেবে গণ্য হয়। Rh ফ্যাক্টর রক্তদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ Rh পজিটিভ মানুষরা Rh পজিটিভ এবং নেগেটিভ উভয় রক্তই গ্রহণ করতে পারেন, কিন্তু Rh নেগেটিভ মানুষরা শুধুমাত্র Rh নেগেটিভ রক্ত গ্রহণ করতে পারেন।
রক্তের গ্রুপের নাম জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
জরুরি অবস্থায় রক্তের প্রয়োজন হলে সঠিক রক্তের গ্রুপ জানা থাকলে দ্রুত রক্তের ব্যবস্থা করা সহজ হয়। জরুরি চিকিৎসা সেবা যেমন, দুর্ঘটনায় রক্তদানের সময় সঠিক রক্তের মিল খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
গর্ভবতী নারীর জন্য রক্তের গ্রুপ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মায়ের এবং শিশুর উভয়ের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক। রক্তের গ্রুপের তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন চিকিৎসা বিষয় যেমন, রক্তাল্পতা, রক্তের গ্রুপের অমিলজনিত সমস্যা (Rh incompatibility), বা জরুরি অবস্থায় রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হয়।
কিছু চিকিৎসা যেমন রক্ত পরিবর্তন বা ট্রান্সফিউশনের জন্য রোগীর সঠিক রক্তের গ্রুপ জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র রোগীর সুস্থতার জন্য নয়, বরং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও এড়াতে সাহায্য করে।
কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মানুষের রক্তের গ্রুপ তাদের নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন O গ্রুপের মানুষদের হৃদরোগের ঝুঁকি তুলনামূলক কম, কিন্তু তারা পাকস্থলীর সংক্রমণে বেশি আক্রান্ত হতে পারেন।
রক্তদানের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো দাতা এবং গ্রহীতার রক্তের গ্রুপের মধ্যে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করা। যদি আপনার শরীরে এমন রক্ত দেওয়া হয়, যার রক্তের কোষে এমন অ্যান্টিজেন থাকে যা আপনার ইমিউন সিস্টেম চিনতে পারে না, তাহলে আপনার ইমিউন সিস্টেম সেই রক্তের কোষগুলোকে আক্রমণ করতে পারে। এর ফলে জীবন-হুমকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
আপনার রক্তের ধরন নির্ধারণ করে কোন ধরনের রক্ত আপনার জন্য নিরাপদ। একইভাবে, দাতার রক্ত গ্রহীতার জন্য নিরাপদ কিনা, তাও রক্তের ধরনের উপর নির্ভর করে।
ভুল গ্রুপের রক্ত ট্রান্সফিউশন করা হলে জ্বর, সর্দি, শ্বাস কষ্ট, পেশী ব্যথা, বমি বমি ভাব, বুকে, পেটে বা পিঠে ব্যথা ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটতে পারে।
রক্তের ধরন |
গ্রহণ করতে পারেন |
দান করতে পারেন |
A+ |
A+, A-, O+, O- |
A+, AB+ |
A- |
A-, O- |
A-, A+, AB-, AB+ |
B+ |
B+, B-, O+, O- |
B+, AB+ |
B- |
B-, O- |
B-, B+, AB-, AB+ |
AB+ |
সমস্ত রক্তের ধরন (সর্বজনীন গ্রহীতা) |
AB+ |
AB- |
AB-, A-, B-, O- |
AB-, AB+ |
O+ |
O+, O- |
O+, A+, B+, AB+ |
O- |
O- |
সমস্ত রক্তের ধরন (সর্বজনীন দাতা) |
ব্লাড গ্রুপ নির্ধারণ করার জন্য সাধারণত একটি রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়, যা খুবই সহজ এবং স্বল্প সময়ে করা সম্ভব। আপনার রক্তের নমুনা নিয়ে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়, যেখানে রক্তের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডির ধরন নির্ধারণ করে ব্লাড গ্রুপ জানা যায়।
আরোগ্য অনলাইন ল্যাবে আপনার ব্লাড গ্রুপ জানার প্রক্রিয়াকে আরও সহজ এবং সুবিধাজনক করে তুলেছে। আপনি আরোগ্যের মাধ্যমে বাসায় বসে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করিয়ে নিতে পারেন। তাদের বিশেষজ্ঞ টিম ঢাকা শহরের যেকোনো স্থানে এসে আপনার বাসায় রক্তের নমুনা নিয়ে যাবে। ফলে আপনার ল্যাবে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আরোগ্য আপনাকে কম খরচে এই সুবিধা প্রদান করে থাকে এবং রক্তের টেস্ট রিপোর্টও আপনার হাতে পৌঁছে দেয়।
আরোগ্য আপনাকে আরও নির্ভুল এবং নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ল্যাবরেটরি পপুলারের সঙ্গে কাজ করে। পপুলারের অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরিতে আপনার ব্লাড স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়, যা আপনার রিপোর্টের সঠিকতা এবং নির্ভুলতা নিশ্চিত করে। আপনি যদি কম খরচে, ঘরে বসে সহজে এবং দ্রুত ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা করাতে চান, তবে আরোগ্য আপনার জন্য সেরা হতে পারে।
আমরা জানলাম রক্তের গ্রুপ কয়টি ও কি কি। এই সমস্ত উপাদান জরুরি পরিস্থিতিতে সঠিক রক্তদানের সময় এবং বিভিন্ন চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। তাই নিজের এবং পরিবারের সবার রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে কোন গ্রুপের রক্ত বেশি?
উত্তরঃ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের মত বাংলাদেশেও B+ পজিটিভ গ্রুপের রক্তের গ্রুপের মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। উইকিপিডিয়ার ডাটা অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রায় ৩৩.১২% মানুষের রক্তের গ্রুপ বি “পজেটিভ”। এবং দ্বিতীয় স্থানে O+ (২৯.২১%) এবং B- (০.৬%) ।
প্রশ্নঃ রক্তের গ্রুপ কোনটি ভালো?
উত্তরঃ রক্তের কোন গ্রুপ ভালো বা খারাপ তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে, বিভিন্ন রক্তের গ্রুপের সুবিধার দিক থেকে কিছু পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, O নেগেটিভ গ্রুপকে "Universal Donor" বলা হয়, কারণ এই গ্রুপের রক্ত সব ধরনের গ্রুপের মানুষকে দেওয়া যায়। অন্যদিকে, AB পজিটিভ গ্রুপকে "Universal Recipient" বলা হয়, কারণ এই গ্রুপের মানুষ যে কোনো ধরনের রক্ত গ্রহণ করতে পারেন।
প্রশ্নঃ কোন রক্তের গ্রুপ সবচেয়ে কম পাওয়া যায়?
উত্তরঃ বাংলাদেশে AB “-” বা এবি নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ সবচেয়ে কম পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ কোন গ্রুপের রক্ত সবাই নিতে পারে?
উত্তরঃ O নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত সবাই গ্রহণ করতে পারে।
0
0