বাচ্চা বিড়ালের সুস্থ বৃদ্ধির জন্য সঠিক খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিড়ালের বাচ্চা কী খাবার খায়? এই প্রশ্নটি অনেক বিড়াল পালনকারী ব্যক্তি জানতে চায়।
এই আর্টিকেলে আমি - বিড়ালের বাচ্চার জন্ম থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত খাবারের চাহিদা ও ক্রমাগত পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খাদ্য তালিকা আলোচনা করব। বিশেষ করে, ক্যাট ফুড, ভিটামিন এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। যা আপনার ছোট্ট বিড়ালের জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
বিড়ালের বাচ্চার বয়স অনুযায়ী খাবার তালিকা তৈরি করতে হয়। বয়স অনুযায়ী বিড়ালের খাবার তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো-
বয়স |
খাবার |
পরিমাণ |
অন্যান্য |
০-৪ সপ্তাহ |
মায়ের দুধ/কিটেন ফর্মুলা |
প্রয়োজন অনুযায়ী |
পাতলা করে দিতে হবে |
৪-১২ সপ্তাহ |
মাছ, মাংস, ভাত (থেঁতলানো), কিটেন ফুড |
ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে |
দুধ কমাতে হবে |
১২ সপ্তাহের পর |
বিভিন্ন ধরনের মাংস, মাছ, ডিম, ক্যাট ফুড |
দিনে ২-৩ বার |
প্রচুর পানি |
গর্ভবতী বিড়াল |
ক্যাট ফুড, পুষ্টিকর খাবার |
প্রয়োজন অনুযায়ী |
ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ নিন |
আপনার বিড়ালের বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করা যেতে পারে। কোনো সন্দেহ থাকলে অবশ্যই ভেটেরিনারিয়ানের সাথে পরামর্শ করুন।
বাচ্চা বিড়ালের খাবার প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালের খাবারের থেকে ভিন্ন হয়। বিড়ালের বয়স কত দিন তার বিবেচনা করে খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করতে হয়।
বিড়ালের বাচ্চার প্রথম ৪ সপ্তাহ সময়টাতে তাদের শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য তাদেরকে সঠিক খাদ্য দেওয়া খুবই জরুরি।
জন্মের পর প্রথম ৪ সপ্তাহে বিড়ালের বাচ্চার জন্য মায়ের দুধই সবচেয়ে উপযুক্ত খাবার। মায়ের দুধে রয়েছে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান যা বাচ্চার শরীরের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য প্রয়োজন। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি যা বাচ্চাকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
যদি কোনো কারণে বাচ্চা মায়ের দুধ না পায়, তাহলে তাকে কৃত্রিমভাবে দুধ খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিম্নলিখিত খাবার ব্যবহার করতে পারেন:
পাউডার দুধ: পাউডার দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে খুব সাবধান হতে হবে। দুধ খুব ঘন হলে বিড়ালের বাচ্চার ডায়রিয়া হতে পারে। তাই দুধকে পানির সাথে খুব ভালোভাবে মিশিয়ে পাতলা করে নিতে হবে।
কিটেন ফর্মুলা: বিড়ালের বাচ্চার জন্য বিশেষভাবে তৈরি kitten food (কিটেন ফুড) পাওয়া যায়। এটি মায়ের দুধের সবচেয়ে কাছাকাছি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ।
গরুর দুধ (সাবধানে): যদি কিটেন ফর্মুলা না পান, গরুর দুধের সাথে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, গরুর দুধে ল্যাকটোজের পরিমাণ বেশি থাকে, যা কিছু বিড়ালের জন্য হজম করা কঠিন হতে পারে।
এ সময় তারা ছোট বিড়াল দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খেতে শুরু করে। এ পর্যায়ে বাচ্চা বিড়ালকে যেসব খাবার দেওয়া যেতে পারে তা হলো
মাছ: কাঁটা ছাড়া ছোট ছোট টুকরো করে থেঁতলে দেওয়া।
মাংস: সেদ্ধ করে থেঁতলে দেওয়া (মশলা ছাড়া)। অল্প পরিমাণে ভাত মিশিয়ে দেওয়া।
কিটেন ফুড: বিশেষভাবে তৈরি করা কিটেন ফুড (পানি মিশিয়ে নরম করে)। কিটেন ফুডে বিড়ালের বাচ্চার বয়স অনুযায়ী সব ধরনের পুষ্টি থাকে। প্যাকেটে সাধারণত ওজন অনুযায়ী খাওয়ানোর নির্দেশনা থাকে। দিনে ৩-৫ বার খাওয়াতে হবে।
ধীরে ধীরে দুধ খাওয়ানো কমিয়ে আনতে হবে। ৮-১০ সপ্তাহ বয়সের পরে সাধারণত দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই সময় থেকে আপনার বিড়ালের বাচ্চা প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালের মতোই বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে পারবে। তবে খাবারের গুণমান ও পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখা খুবই জরুরি।
তিন মাস পর থেকে বাচ্চা বিড়ালের খাবার হতে পারে-
মাংস: মুরগি, গরু ইত্যাদি মাংস। কাঁচা মাংস না দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করে দিন।
মাছ: স্যামন, টুনা, চিংড়ি ইত্যাদি। কাঁচা মাছ না দিয়ে ভালো করে সেদ্ধ করে দিন।
ডিম: সপ্তাহে একবার ডিমের কুসুম খাওয়াতে পারেন।
বিড়ালের বিশেষ খাবার: বিড়ালের বাচ্চার বিশেষ খাবার Cat Food যা বিড়ালের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে।
ভাত: অল্প পরিমাণে ভাত দিতে পারেন। তবে ভাতের সাথে অবশ্যই মাংস মিশিয়ে দিন।
তেল, মশলা, লবণ, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন: এই সব উপাদান বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর।
কাঁচা মাছ বা মাংস: কাঁচা মাংস বা মাছে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যা বিড়ালকে অসুস্থ করে তুলতে পারে।
মায়ের দুধ: এই সময় মা বিড়ালের দুধ সবচেয়ে উপযুক্ত।
দুধ না পেলে: গরুর দুধ (পানি মিশিয়ে) বা কিটেন ফর্মুলা সিরিঞ্জ বা ড্রপার দিয়ে খাওয়ান। প্রতি 2-3 ঘন্টা পরপর খাওয়ান।
কিটেন ফুড: কিটেন ফুড নরম করে বা পানি মিশিয়ে খাওয়ান। কিটেন ফুডে বিড়াল ছানার পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান থাকে। ধীরে ধীরে দুধের পরিমাণ কম করতে হবে।
ক্যাট ফুড: এই সময় থেকে ক্যাট ফুড দেওয়া শুরু করা যেতে পারে।
ভাত, মাছ, মাংস: বিড়াল মাংসাশী প্রাণী, তাই মাংস খাওয়ানোই সবচেয়ে ভাল। দিনে ২-৩ বার খাওয়াতে হবে।
বেবি ফিডার, ড্রপার বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করে আপনি বিড়ালের বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারেন। প্রথম চার সপ্তাহে বাচ্চাকে প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর খাওয়াতে হবে।
খাবারের তাপমাত্রা: খাবারটি গরম বা ঠান্ডা না হয়ে মাঝারি হওয়া উচিত।
পরিচ্ছন্নতা: খাবারের পাত্র সবসময় পরিষ্কার রাখুন।
পর্যবেক্ষণ: বাচ্চার ওজন, খাওয়া-দাওয়া লক্ষ্য রাখুন। কোনো সমস্যা হলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিড়াল কি খায় শুধু তা জানলেই হবে না কিভাবে বিড়ালের বাচ্চার যত্ন নিতে হয় সেটিও জানতে হবে। বিড়ালের লোম লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের উকুনের কারণে বিড়াল অনেক অস্বস্তি বোধ করে। কিছু ক্ষেত্রে চুলকানি দেখা দেয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাছি বিড়ালকে বিরক্ত করে। তাই এসব কিছু থেকে বিড়ালকে রক্ষা করতে সঠিকভাবে বিড়ালের যত্ন নিতে হবে।
বিড়ালকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন গোসল এবং নিয়মিত চিরুনি করে করিয়ে দিতে পারেন।
বিড়ালকে মাছি, উকুন এবং চুলকানি থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন pet care product ব্যবহার করতে পারেন। তবে বিড়ালের ছোট বাচ্চার জন্য এসব প্রোডাক্ট ব্যবহার না করাই ভালো। বিড়ালের বাচ্চার বয়স ৬ মাসের বেশি হলে এ ধরনের প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে কোনো ধরনের পণ্য ব্যবহার করার আগে অবশ্যই আপনার পশুচিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
বাচ্চা বিড়াল জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ শুধু মায়ের দুধ খায়। ৪ সপ্তাহ বয়সের পর বিড়ালের ছোট বাচ্চা দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারও খেতে পারে। এই সময় দিনে ৩-৫ বার খাওয়ানো উচিত। ১২ সপ্তাহের পর বিড়ালের বাচ্চা প্রায় প্রাপ্তবয়স্ক বিড়ালের মতো খাবার খেতে পারে। দিনে ২-৩ বার খাওয়ানো যথেষ্ট।
না, বাচ্চা বিড়ালকে কাঁচা মাংস খাওয়ানো উচিত নয়। কাঁচা মাংসে ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যা বাচ্চা বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর।
বাচ্চা বিড়ালদের পরিমিত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি দেওয়া উচিত।
সাধারণত মা বিড়াল তার বাচ্চাদের খাওয়া শেখায়। তবে যদি কোন কারণে মা না থাকে, তাহলে আপনি ছোট চামচ বা সিরিঞ্জ দিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন।
হ্যাঁ, বাচ্চা বিড়ালকে ক্যাট ফুড দেওয়া যাবে। তবে বাচ্চার বয়স অনুযায়ী বিশেষ করে তৈরি কেটেন ফুড দেওয়া উচিত।
সাধারণত বিড়ালের বাচ্চা ৮-১০ সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের দুধ খায়। তবে কখনো কখনো এই সময় একটু বেশি বা কম হতে পারে।
১ মাসের বিড়ালের বাচ্চার খাবার হলো মা বিড়ালের দুধ। যদি বাচ্চা মা ছাড়া থাকে, তাহলে বিশেষভাবে তৈরি কিটেন ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হবে।
শেষ কথা
এই আর্টিকেলে আমরা বিড়ালের বাচ্চার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা এবং বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী ক্যাট ফুড এর ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। মনে রাখবেন, ক্যাট ফুড ছাড়াও, আপনার বিড়ালের বাচ্চাকে ঘরে তৈরি খাবার দিতে পারেন। আমরা আশা করি, এই আর্টিকেলের তথ্যগুলো আপনার বিড়ালছানাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
মনে রাখবেন, বিড়ালের ভিটামিন আপনার বিড়ালের বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট দিতে পারেন।
Was this post helpful?
0
0