নখের যত্ন সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আমাদের দেশের গরম, আর্দ্র জলবায়ুতে নখে ময়লা জমে সহজেই সংক্রমণ হতে পারে। সুন্দর ও মজবুত নখ শুধু আমাদের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, এটি স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রতীকও। আমাদের কিছু সাধারণ ঘরোয়া উপাদান দিয়ে সহজেই হাতের নখকে পরিষ্কার, মজবুত এবং ঝকঝকে রাখা সম্ভব।
নখ আমাদের হাতের সৌন্দর্যের বড় একটি অংশ। তবে নখ শুধু সৌন্দর্যই নয়, এটি স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতারও প্রতিফলন। তাই নিয়মিতভাবে সঠিক উপায়ে নখের যত্ন নেওয়া জরুরি।
ঘরে বসেই কিছু সহজ এবং কার্যকরী উপায়ে আপনি নখকে শক্তিশালী এবং সুন্দর রাখতে পারেন। এই গাইডটি বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার উপযোগীভাবে সাজানো হয়েছে।
নখের গোড়ার কিউটিকল অংশটি ঠিকমতো যত্ন না নিলে এটি শুকিয়ে যেতে পারে এবং নখ ভেঙে যেতে পারে। প্রতিদিন নারকেল তেল বা কিউটিকল ক্রিম ব্যবহার করুন। রাতে কিউটিকলে হালকা ম্যাসাজ করলে এটি নখের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় এবং নখ ভঙ্গুর হওয়া প্রতিরোধ করে।
কিউটিকল শুষ্ক ও ফেটে গেলে নখের গোড়ায় ব্যাকটেরিয়া প্রবেশের ঝুঁকি থাকে, যা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত কিউটিকল আর্দ্র রাখলে নখ থাকবে মজবুত ও স্বাস্থ্যকর। এছাড়াও, কিউটিকল কাটার বদলে গরম পানিতে নখ ভিজিয়ে নরম করার পর কিউটিকল পুশার দিয়ে আলতো করে পেছনে ঠেলে রাখুন। প্রতিদিনের এই সামান্য যত্ন নখের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে সহায়ক।
প্রতিদিন শোবার আগে কিউটিকলে নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করুন। এতে নখের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় এবং শুষ্কতা দূর হয়। আপনি চাইলে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তেলও ব্যবহার করতে পারেন, যা দ্রুত শুষে যায় এবং কিউটিকলকে মোলায়েম রাখে।
হাতের নখ সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর করতে নিয়মিত কিছু যত্নের প্রয়োজন। নখের সৌন্দর্য বাড়াতে প্রথমে নখকে আর্দ্র রাখা গুরুত্বপূর্ণ, এজন্য প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে নখে নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল বা ভিটামিন ই তেল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করুন।
এটি নখের চারপাশের ত্বক নরম রাখবে এবং নখ ভেঙে যাওয়া রোধ করবে।
প্রতি সপ্তাহে একবার নখ পরিষ্কার রাখতে কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস ও লবণ মিশিয়ে তাতে হাত ডুবিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। এরপর নরম ব্রাশ দিয়ে হালকা ঘষে নখের ময়লা দূর করুন। এই পদ্ধতিটি নখ উজ্জ্বল এবং মসৃণ করে তুলবে।
নখে হলদে ভাব দূর করতে এক চামচ লেবুর রস ও তিন চামচ অলিভ অয়েল হালকা গরম করে নিন। এই মিশ্রণে সপ্তাহে একদিন নখ ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এতে নখের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরবে এবং এটি আরও শক্তিশালী হবে।
নখ ফাইল ও ট্রিম করার সময় সাবধান থাকতে হবে। নখের প্রান্তে ছোট ছোট চির ধরা থেকে ফাইলের মাধ্যমে রক্ষা করুন। নরম নেল ফাইল ব্যবহার করে নখের প্রান্ত গুলো সমান করুন এবং ময়েশ্চারাইজার দিয়ে নখ নরম রাখুন।
পায়ের নখের ময়লা দূর করতে একটি সহজ ঘরোয়া পদ্ধতি হলো কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ এবং এক চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখা।
এই মিশ্রণে চাইলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রসও যোগ করতে পারেন, যা প্রাকৃতিকভাবে ময়লা দূর করে ও নখ উজ্জ্বল করে তোলে।
নির্ধারিত সময় পর নরম ব্রাশ দিয়ে নখ ঘষে নিন, এতে নখের ভেতরের ময়লা ও জমে থাকা জীবাণু পরিষ্কার হয়ে যাবে। এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে ১-২ বার অনুসরণ করলে পায়ের নখ পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর থাকবে।
নখ রাঙাতে নেইল পলিশ ব্যবহারের পর তা বেশি সময় ধরে না রেখে তুলে ফেলুন। নেইল পলিশ যেমন হাতের সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনই এটি ব্যবহারের পর সঠিক যত্ন না নিলে নখে ক্ষতি হতে পারে। নেইল পলিশ ব্যবহার করার পরে অবশ্যই তা নিয়মিত তুলে ফেলুন এবং ভালো মানের নেইল পলিশ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
নেইল পলিশ তুলতে অ্যাসিটোন-মুক্ত রিমুভার ব্যবহার করলে নখের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকে, যা নখকে শুষ্কতা ও ভঙ্গুরতা থেকে রক্ষা করে। এছাড়া, নেইল পলিশ তোলার পর নখে কিউটিকল অয়েল বাম দিয়ে ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করুন।
বাড়িতে পানি বা সাবান-ডিটারজেন্ট ব্যবহারের সময় নখকে রক্ষা করার জন্য হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করুন। গ্লাভস নখের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং নখ ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
নখ ভঙ্গুর হলে কিছু অতিরিক্ত যত্ন প্রয়োজন। বায়োটিন বা ভিটামিন সি এবং ই সমৃদ্ধ কিউটিকল ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এই ক্রিমগুলো নখের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় এবং নখ ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
সপ্তাহে একদিন কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবণ এবং এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে তাতে নখ ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এটি নখের শুষ্কতা দূর করবে এবং নখ আরও মজবুত হবে। নখের যত্নে কুসুম গরম পানির সলিউশন খুবই কার্যকর একটি ঘরোয়া উপায়। এর জন্য প্রথমে হালকা গরম পানি একটি বাটিতে নিন। এতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন, চাইলে সামান্য লেবুর রস এবং এক চা চামচ অলিভ অয়েল বা নারিকেল তেল যোগ করতে পারেন। এবার এই সলিউশনে হাত বা পায়ের নখ ১০-১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন।
এই কুসুম গরম পানির সলিউশন নখের চারপাশের ময়লা, মরা চামড়া এবং জমে থাকা জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রস নখের দাগ দূর করে এবং উজ্জ্বলতা আনে, আর তেল নখকে আর্দ্র রাখে, যা নখকে ভেঙে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। সপ্তাহে ১-২ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে নখ স্বাস্থ্যকর, শক্তিশালী এবং ঝকঝকে থাকবে।
নখকে শক্তিশালী রাখতে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, এবং বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। ডিম, কলা, মাশরুম, ও কলিজা সহজলভ্য এবং এই উপাদানগুলো নখের দুর্বলতা দূর করে। ভিটামিন সি এবং ই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে, যা নখের প্রাকৃতিক গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ডিম, কলা, মাশরুম, শাকসবজি এবং কলিজা বাংলাদেশের বাজারে সহজেই পাওয়া যায় এবং এগুলো নখের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
নিয়মিতভাবে এই টিপস মেনে চললে আপনার নখ হবে মজবুত, সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর। বাড়িতে সহজলভ্য উপাদান ব্যবহার করে আপনি নিজেই নখের সঠিক যত্ন নিতে পারবেন এবং তা দীর্ঘদিন ধরে সুন্দর থাকবে।
যদি নখে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দেখা দেয়, যেমন হলদে ভাব, শুষ্কতা, বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন, তবে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। মাঝে মাঝে প্রফেশনাল ম্যানিকিওর নিলে নখ আরও সুস্থ এবং সুন্দর থাকে।
নখ ভাঙার অন্যতম কারণ আর্দ্রতার অভাব, বায়োটিন বা প্রোটিনের ঘাটতি, এবং অতিরিক্ত পানি ও রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসা। নখ ভাঙা রোধে নিয়মিত কিউটিকল অয়েল ব্যবহার, সুষম খাদ্য এবং গ্লাভস পরার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
হলদে নখ সাধারণত নেল পলিশের রঙের দাগ থেকে হয়। লেবুর রস দিয়ে নখ ঘষলে হলদে ভাব দূর হতে পারে। নেল পলিশ ব্যবহারের আগে বেস কোট লাগান এবং মাঝে মাঝে নখ পলিশমুক্ত রাখুন।
হ্যাঁ, নিয়মিত নেইল পলিশ ব্যবহার নখকে শুষ্ক এবং ভঙ্গুর করে তুলতে পারে। নেইল পলিশ ব্যবহারের মধ্যে বিরতি নিন এবং অ্যাসিটোন-মুক্ত নেইল পলিশ রিমুভার ব্যবহার করুন।
বায়োটিন, প্রোটিন, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার নখের বৃদ্ধিতে সহায়ক। ডিম, মাছ, শাকসবজি এবং বাদাম নখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফাঙ্গাল ইনফেকশন প্রতিরোধে টি-ট্রি অয়েল এবং গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। ইনফেকশন দীর্ঘস্থায়ী হলে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন
শীতকালে নখ শুষ্ক হলে নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা কিউটিকল অয়েল দিয়ে প্রতিদিন ম্যাসাজ করুন। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারেও নখের আর্দ্রতা বজায় থাকে
প্রফেশনাল ম্যানিকিওর মাঝে মাঝে করালে নখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং বিভিন্ন সমস্যাও তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে। তবে নিজের যত্নেও নখ সুস্থ রাখা সম্ভব
এই টিপসগুলো আপনার নখকে মজবুত এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়ক হবে।
0
0