কুয়াশার চাঁদর মুড়ি দিয়ে গুটি গুটি পায়ে চলে এসেছে শীতকাল। শীতকাল মানেই রাস্তার ওলিতে গলিতে ধোঁয়া ওঠা ভাঁপা পিঠা, হরেক রকমের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা, খেঁজুর রস ইত্যাদি। এ সময় পোষাকেও বেশ বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এত সব বৈচিত্র্য মলিন হয়ে যায় যখন শীতের দিনে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, কালো দেখায়। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আমরা শীতের দিনে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারি।
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেবো? আসলে, অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতকালে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে দরকার একটু বাড়তি যত্ন কারণ এ সময় ত্বক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। শীতল বাতাস ও কম আর্দ্রতার জন্য ঠোঁট ফেঁটে যায়। শীতে শুষ্ক ত্বকের যত্ন নিতে করনীয় হলো:-
খাদ্যাভ্যাস: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন। প্রচুর ফল, সবজি, বাদাম, এবং বীজ ত্বককে ভিতর থেকে পুষ্টি জোগায় এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
হাইড্রেট থাকা: শরীরের ভেতর থেকে হাইড্রেটেড থাকতে প্রচুর পরিমানে পানি গ্রহণ করতে হবে। হার্বার টি, লেবু জল খেলেও ত্বক হাইড্রেট থাকার পাশাপাশি উজ্জ্বলতা বাড়বে।
গরম পানির শাওয়ার: গরম পানির শাওয়ার ত্বকের প্রয়োজনীয় তেল রিমুভ করে ফেলে। তাই শীতকালে গরম পানি দিয়ে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন। গরম পানির পরিবর্তে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন এবং এ সময় বেশিক্ষণ ধরে গোসল করা উচিৎ নয়।
রাতের সময় ত্বকের যত্ন: সারাদিন বাইরের ঘাম, পলিউশন, ডার্ট, সানস্ক্রিন মুখে আটকে থাকে। তাই রাতের বেলা স্কিনকে একটু বাড়তি যত্ন করতে হয় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই ডাবল ক্লিনসিং করবেন। অর্থাৎ ডাবল ক্লিনসিং এর শুরুতে অয়েল বেজড ক্লেনসিং অয়েল দিয়ে মুখ ক্লিন করে নিতে হবে। তারপর একটা মাইল্ড ফেস ওয়াশ দিয়ে ফেস ক্লিন করতে হবে।
এবার ভালো একটি টোনার ব্যবহার করতে হবে যা মুখের অতি ক্ষুদ্র ডার্টকে রিমুভ করে মুখ ক্লিন রাখবে। তাই আপনার স্কিন টাইপ অনুযায়ী সিরাম এবং ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে স্কিনের হাইড্রেশন লক করে নিন।
পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম ত্বককে রিজ্যুভিনেট করতে সাহায্য করে এবং ন্যাচারাল ওয়েতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
আপনার কি সত্যিই শীতের দিন স্কিন কেয়ার রুটিন পরিবর্তন করা প্রয়োজন? অবশ্যই! শীতকালীন স্কিন কেয়ার নিয়ে নিচে ডার্মাটোলজিস্টের কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো:-
ক্লিনজার ব্যবহার: হার্স সাবান ব্যবহার করবেন না যা ত্বকের ন্যাচারাল অয়েল রিমুভ করে ফেলে। এর পরিবর্তে হাইড্রেটিং ক্লিনজার ব্যবহার করুন যা ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে। যেকোনো প্রোডাক্ট ত্বকের গভীরে প্রবেশ করার পূর্ব শর্ত হলো ত্বকের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। তাই ফেস ক্লিন করে তবেই প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার: ভালো ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ব্যবহার করুন যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। অনেকের একটি ভুলের কারণে শীতের দিনে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়েও স্কিন হাইড্রেট থাকে না। তারা মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার পর ময়েশ্চারাইজার, ভ্যাজলিন কিংবা লোশন ইউজ করে। এটা একদম অনুচিত। শাওয়ারের পরপরই এটি ব্যবহার করুন যাতে আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়। ভিটামিন-সি, হায়ালুরনিক এসিড, গ্লিসারিন, অথবা সেরামাইড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার খুঁজুন।
এক্সফোলিয়েট জেন্টলি: নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন ত্বকের ডেড স্কিন সেল দূর করতে সাহায্য করে, যা ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয় তেমন এক্সফোলিয়েশনও। তাই জেন্টলি ত্বক স্ক্রাব করুন সপ্তাহে এক থেকে দুইবার।
হায়ালুরনিক এসিড: শীতকালে সবার ত্বক ড্রাই হয়ে যায়। তাই হায়ালুরনিক এসিড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজিং স্কিম ব্যবহার করা উচিৎ। হায়ালুরনিক এসিড আমাদের স্কিনকে হাইড্রেট রাখে।
সানস্ক্রিন ব্যবহার: শীতেও সূর্যের UV রশ্মি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই রোদ থেকে ত্বককে বাঁচাতে কমপক্ষে SPF 30 যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
মাস্ক ব্যবহার: শীতকালে হিউমিডিটি লেভেল এবং কম তাপমাত্রা অনেক ধরনের স্কিন প্রবলেমের কারণ। তাই এ সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ যা স্কিনের ইমপিউরিটিস দূর, স্পট রিমুভ, রিজ্যুভিনেট এবং স্কিনকে এক্সফোলিয়েট করবে। কয়েক ধরনের মাস্ক রয়েছে। যেমন:-
শীট মাস্ক
পিল-অফ মাস্ক
ক্লে মাস্ক
জেল মাস্ক
আপনার পছন্দের মাস্ক কোনটি?
ঠোঁটের যত্ন: ঠোঁট ফাঁটা রোধ করতে ভ্যাজলিন অথবা বোড়োলিন ব্যবহার করুন।
শীতে ত্বকের যত্ন শুরু করুন আমাদের সাথে। অথেনটিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট পারচেজ করতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইটটিতে। Click here!
শীতকালে ত্বক শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ হয়ে যেতে পারে, তবে কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিচে কয়েকটি কার্যকর ঘরোয়া উপায় দেওয়া হলো:
মধু ও দুধ: দুধ স্কিনে ন্যাচারাল ক্লিনসার এর কাজ করে। মধু এবং দুধ সমান পরিমাণ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপর এটি ত্বকে প্রয়োগ করুন এবং ১৫-২০ মিনিট পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মধু ত্বককে হাইড্রেট করে এবং দুধ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
হলুদ ও বেসনের মাস্ক: এক চামচ হলুদ এবং দুই চামচ বেসন নিয়ে তাতে সামান্য দুধ মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। হলুদে রয়েছে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ত্বকের ফাংগাল একনে দূর এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও বেসন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে।
নারকেল তেল: রাতের বেলা নারকেল তেল ত্বকে মালিশ করুন এবং তা সারা রাত রেখে দিন। এটি ত্বককে গভীরভাবে হাইড্রেট করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
টমেটোর রস: টমেটোর রস ত্বকে প্রয়োগ করুন এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ট্যান ও দাগ দূর করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
শসার রস: শসার রস ত্বকে প্রয়োগ করুন এবং ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ফ্রেশনেস, আর্দ্রতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেল ত্বকে লাগিয়ে সারারাত রেখে দিন। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে।
সতর্কতা: এলার্জি জনিত কোনো সমস্যা থাকলে প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। প্রাকৃতিক জিনিস এর পরিবর্তে ডার্মাটোলজিক্যালি সার্টিফাইড প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
শীতকাল এসে গেছে তাই বলে কি মেকাপ করবো না? কখনোই না! কখনোই না!
কিছু টিপস ফলো করলে শীতকালেও মেকাপ দেখাবে ফ্ললেস।
হাইড্রেটিং প্রাইমার: মেকআপের আগে হাইড্রেটিং প্রাইমার ব্যবহার করুন যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং মেকআপের জন্য প্রস্তুত করে। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে এবং মেকআপকে দীর্ঘস্থায়ী করে।
হাইড্রেটিং ফাউন্ডেশন: শীতকালে হাইড্রেটিং ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন যা ত্বককে শুষ্ক করে না। এটি ত্বকে মসৃণ ভাবে মিশে যায় এবং ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
ক্রিম-বেসড প্রোডাক্ট: পাউডারের পরিবর্তে ক্রিম-বেসড ব্লাশ, ব্রোঞ্জার ও হাইলাইটার ব্যবহার করুন। এটি ত্বককে শুষ্ক করে না বরং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
লিপ বাম ও লিপস্টিক: লিপস্টিক ব্যবহারের আগে অবশ্যই লিপ বাম ব্যবহার করুন যাতে ঠোঁট শুষ্ক না হয়ে যায়। তারপর একটি ময়েশ্চারাইজিং লিপস্টিক ব্যবহার করুন যা ঠোঁটকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করবে।
সেটিং স্প্রে: মেকআপ সম্পন্ন করার পর একটি হাইড্রেটিং সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন যা মেকআপকে দীর্ঘস্থায়ী করে এবং ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।
নিয়মিত স্কিন কেয়ার রুটিন অনুসরণ করুন: মেকআপ ব্যবহারের আগে এবং পরে নিয়মিত স্কিন কেয়ার রুটিন অনুসরণ করুন। ত্বককে পরিষ্কার, টোন এবং ময়েশ্চারাইজ করুন যাতে ত্বক সুস্থ থাকে এবং মেকআপ ভালোভাবে বসে।
১.শুষ্ক ত্বক: শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া খুবই সাধারণ সমস্যা। এর প্রতিকার হলো নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা। গ্লিসারিন বা হায়ালুরনিক এসিড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন যা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
২.ঠোঁট ফাটা: শীতকালে ঠোঁট ফেটে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এর প্রতিকার হিসেবে নিয়মিত লিপ বাম ব্যবহার করুন যা শিয়া বাটার বা কোকো বাটার সমৃদ্ধ।
৩.খসখসে ত্বক: ত্বকের খসখসে ভাব দূর করার জন্য নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করুন। ঘরে তৈরি স্ক্রাব যেমন চিনি ও মধুর মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে মসৃণ রাখে।
৪. চুলকানি: শীতকালে ত্বকের চুলকানি একটি অস্বস্তিকর সমস্যা হতে পারে। এর প্রতিকার হিসেবে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন যা ত্বককে প্রশান্তি দেয় এবং চুলকানি কমায়।
৫. র্যাশ: ত্বকে শীতের কারণে র্যাশ হতে পারে। র্যাশ কমানোর জন্য কোলয়েডাল ওটমিল বাথ নিতে পারেন। এটি ত্বকের র্যাশ দূর করে।
স্কিন কেয়ার থেকে হেয়ার কেয়ার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় যেকোনো প্রোডাক্ট হাতের নাগালে পেতে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট টি। Click here!
প্রশ্নঃ কোন ভিটামিন খেলে চেহারা সুন্দর হয়?
উত্তর: ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, পিগমেন্টেশন দূর করে, কোলাজেন প্রোডাক্টশন বাড়ায়।
প্রশ্নঃ শীতকালে ত্বক কেনো শুষ্ক হয়ে যায়?
উত্তর: বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকার কারনে।
প্রশ্নঃ শীতে কোন ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিৎ?
উত্তর: শীতে হায়ালুরনিক এসিড, গ্লিসারিন, সেরামাইড, শিয়া বাটার সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিৎ।
প্রশ্নঃ শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করার কি প্রয়োজন আছে?
উত্তর: অবশ্যই আছে। SPF 30+++ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে বাঁচতে।
Was this post helpful?
0
0