মানবদেহে রক্তের বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে, যা চিকিৎসা সেবা গ্রহণ ও রক্ত দান প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক রক্তের গ্রুপ জানা থাকলে এটি রক্তদান, সার্জারি, এবং গর্ভাবস্থার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপদ চিকিৎসার নিশ্চয়তা বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু অনেকেই জানেন না, কিভাবে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা ধাপে ধাপে আলোচনা করব রক্তের গ্রুপ নির্ণয় পদ্ধতি, এর গুরুত্ব, এবং রক্ত পরীক্ষার খরচসমুহ।
রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা সাধারণত ল্যাবরেটরিতে বিশেষ কিছু ধাপে সম্পন্ন করা হয়। নিচে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করার প্রক্রিয়া এবং এর বিভিন্ন ধাপ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
প্রথম ধাপে, রোগীর শরীর থেকে সামান্য (2 - 5ml) পরিমাণ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। বাহুর শিরা থেকে রক্ত সংগ্রহ করার জন্য একটি সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়। রক্ত নেওয়ার পর, এটি একটি ল্যাবরেটরি টিউবে (Levender-Toptube Containing EDTA) স্থানান্তর করে সংরক্ষন করা হয়।
অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট (Anticoagulant) গুলো রক্তের সাথে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মিলিত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে টিউবটি কয়েকবার আলতো ভাবে উল্টাতে হবে।
রক্ত সংগ্রহের পর, ল্যাবরেটরিতে রক্তের নমুনাটি প্রক্রিয়াকরণ করে দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত করা হয়: ব্লাড সেল (RBC, WBC Platelet) রেড ব্লাড সেল ব্লাড গ্রুপিং এর জন্য মূলত ব্যবহৃত হয় কারণ এতে Antigen A এবং Antigen B থাকে যা ব্লাড টাইপ ডিটারমাইন করে এবং প্লাজমা হলো রক্তের তরল অংশ।
রক্তের গ্রুপ নির্ধারণের জন্য প্রধানত দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়: এন্টিজেন পরীক্ষণ এবং এন্টিবডি পরীক্ষণ।
এন্টিজেন পরীক্ষণ: Specific Antisera (Anti A, Anti B) অ্যাড করা হয় যেটাতে এন্টিবডি থাকে এবং এটি এন্টিজেন এর সাথে রিএক্ট করে। এন্টিজেন পরীক্ষণের সময়, রক্তের লোহিত কণার উপর থাকা এ এবং বি ধরনের প্রোটিন বা এন্টিজেন চিহ্নিত করা হয়। যদি লোহিত রক্ত কণায় এন্টিজেন ‘এ’ থাকে তবে সেটি এ গ্রুপ, এবং যদি ‘বি’ এন্টিজেন থাকে তবে সেটি বি গ্রুপ। যদি উভয় এন্টিজেনই উপস্থিত থাকে, তবে সেটি এবি গ্রুপ, আর যদি কোন এন্টিজেনই না থাকে, তবে সেটি ও গ্রুপ হিসেবে নির্ধারিত হয়।
এন্টিবডি পরীক্ষণ: এন্টিবডি পরীক্ষণের মাধ্যমে রক্তের প্লাজমায় থাকা এন্টিবডি ‘এ’ এবং ‘বি’ নির্ধারণ করা হয়। এই পরীক্ষা এন্টিজেনের সাথে সম্পর্কিত নয় বরং এন্টিবডির উপস্থিতির ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। এন্টিবডি এ এবং বি উভয় রক্তের ধরন নির্ধারণে সহায়ক।
রক্তের গ্রুপ নির্ধারণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রেসাস (Rh) ফ্যাক্টর। Rh ফ্যাক্টর বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন যা রক্তের লোহিত কণার উপর উপস্থিত থাকে। যদি এই প্রোটিনটি থাকে, তবে সেটি Rh পজিটিভ (Rh+) হিসেবে গণ্য হয়, আর যদি না থাকে, তবে সেটি Rh নেগেটিভ (Rh-) হিসেবে গণ্য করা হয়। রক্তের গ্রুপ এবং এই Rh ফ্যাক্টর একত্রে রক্তের পূর্ণ গ্রুপ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে, যেমনঃ এ+, বি-, ও+, ইত্যাদি।
রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা বিভিন্ন কারণে করা হতে পারে। নিচে রক্ত গ্রুপ পরীক্ষার কিছু প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:
রক্তদান ও রক্তগ্রহণের জন্যঃ রক্তদান বা রক্তগ্রহণের আগে রক্ত গ্রুপ জানা অত্যন্ত জরুরি। রক্ত গ্রুপ মিলে গেলে রক্ত স্থানান্তর নিরাপদ হয় এবং জটিলতার ঝুঁকি কমে।
গর্ভাবস্থায়ঃ গর্ভবতী মহিলাদের রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে Rh ফ্যাক্টর নির্ধারণের জন্য। যদি মায়ের এবং সন্তানের রক্ত গ্রুপের মধ্যে Rh ফ্যাক্টরের অমিল থাকে, তাহলে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
সার্জারি বা বড় অস্ত্রোপচারের আগেঃ যে কোনো বড় অস্ত্রোপচারের আগে রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়, কারণ অস্ত্রোপচারের সময় রক্তক্ষরণ হলে জরুরি রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেঃ কিছু রোগের চিকিৎসার জন্য, যেমন অ্যানিমিয়া বা থ্যালাসেমিয়ায়, সঠিক রক্ত গ্রুপ জানা জরুরি। এছাড়াও রক্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ সঠিকভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়।
মেডিকেল রিসার্চ বা গবেষণায়ঃ মেডিকেল গবেষণায় রক্ত গ্রুপের তথ্য প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব এবং রক্ত গ্রুপের সাথে তাদের সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়।
ব্লাড গ্রুপ টেস্ট করানোর ক্ষেত্রে সাধারণত বিশেষ কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না, তবে কিছু বিষয় মনে রাখা ভালো, যেমনঃ
ব্লাড গ্রুপ টেস্টের আগে আপনি আপনার স্বাভাবিক খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করতে পারেন।
সাধারণত ব্লাড গ্রুপ টেস্টের জন্য চলমান কোন ওষুধ বন্ধ করার প্রয়োজন হয় না।
পরীক্ষা করার আগে পর্যাপ্ত পানি পান করলে রক্ত সংগ্রহ করা সহজ হয়।
যেহেতু রক্ত সাধারণত বাহুর শিরা থেকে নেওয়া হয়, তাই এমন পোশাক পরুন যা সহজে বাহু পর্যন্ত উঠানো যায়। অথবা কিছুটা পাতলা পোশাক পরুন যার উপর থেকেই রক্ত সংগ্রহ করা যেতে পারে।
রক্ত নেওয়ার সময় চেষ্টা করুন স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে শিথিল থাকার।
বাংলাদেশে রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করার খরচ সাধারণত খুব বেশি নয়। সরকারি হাসপাতালে রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা খরচ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, জরুরি পরিস্থিতিতে বা রক্তদানের সময় এটি বিনামূল্যেও করানো যায়।
বেসরকারি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্ত গ্রুপ পরীক্ষার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। সাধারণত, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করতে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। কিছু উচ্চমানের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বা বিশেষ ক্ষেত্রে খরচ আরও বেশি হতে পারে।
এছারাও বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য ক্যাম্প বা ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প আয়োজিত হয়, যেখানে বিনামূল্যে রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করানো হয়। এ ধরনের ক্যাম্পে সাধারণ মানুষ সহজেই রক্ত গ্রুপ পরীক্ষা করতে পারেন।
ব্লাড গ্রুপ টেস্ট রিপোর্ট সঠিকভাবে নির্ধারণ করার জন্য নির্ভরযোগ্য সেন্টার বেছে নেওয়া উচিত। তাই আমরা নিশ্চিত করছি স্বল্প খরচে উন্নত ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিতে ঘরে বসে রক্তের গ্রুপ টেস্ট।
ঢাকা শহরে কর্মব্যাস্তর ভিতর যানযট পেরিয়ে কোন ল্যাবে গিয়ে রক্তের গ্রুপ টেস্ট করা প্রায়ই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে। এই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে আরোগ্য দিচ্ছে ঢাকা শহরে ঘরে বসে ব্লাড গ্রুপ টেস্টের সুবিধা মাত্র ২৫৫ টাকায়।
আপনি আমাদের ওয়েবসাইট অথবা মোবাইল এপ থেকে টেস্ট বুক করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে আরোগ্যর ল্যাব টেস্ট মেন্যুতে Blood Group & RH Factor অপশনে গিয়ে “Book Test”- এ ক্লিক করে শুধু আপনার মোবাইল নাম্বরটি প্রদান করতে হবে। প্রদানকৃত মোবাইল নম্বরে দ্রুত যোগাযোগ করে, আমাদের অবিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মী আপনার বাসায় পৌঁছে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করবে।
আমরা আপনার রক্তের নমুনা অত্যন্ত সাবধাণতার সঙ্গে সংরক্ষন করে উন্নত পদ্ধতি ও আধুনিক ল্যাবে পরিক্ষা করে থাকি। আমাদের ল্যাব পার্টনার হলো পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নমুনা সংগ্রহের ১২ ঘন্টার মধ্যে আপনাকে Blood Group & RH Factor Test এর রিপোর্ট প্রদান করা হবে।
আমরা জানলাম, রক্তের গ্রুপ নির্ণয় পদ্ধতি ও সঠিক রক্ত গ্রুপ জানার প্রয়োজনীয়তা। মানুষের জীবন অনিশ্চিত। যেকোনো জটিল অবস্থা আসার আগেই আপনার রক্তের গ্রুপ জেনে নেয়া উচিত। তাই দেরি না করে, ঘরে বসে রক্তের গ্রুপ জানতে আজই যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
প্রশ্নঃ ব্লাড গ্রুপ কি?
উত্তরঃ ব্লাড গ্রুপ হলো রক্তের ধরন যা এ, বি, এবি, ও এবং Rh ফ্যাক্টর অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।
প্রশ্নঃ কেন রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়?
উত্তরঃ রক্তদান, রক্তগ্রহণ এবং চিকিৎসা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয়।
প্রশ্নঃ রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা কি খালি পেটে করা হয়?
উত্তরঃ না, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা খালি পেটে করার প্রয়োজন নেই।
প্রশ্নঃ কিভাবে বাড়িতে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করবেন?
উত্তরঃ বাড়িতে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে আমাদের Blood Group & RH Factor টেস্ট বুক করুন।
0
0