এনালগ ও ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহারের করে আমরা খুব সহজেই শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করতে পারি। জ্বর নির্ণয় করার জন্য ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার কেনার সময় এর দাম, সঠিক রিডিং প্রদানের ক্ষমতা সহ বেশ কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হয়।
কিন্তু অনেকের জন্যই বিভিন্ন ব্র্যান্ডের থার্মোমিটারের ব্রান্ড ও দাম সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
এখানে, আমরা বাংলাদেশে সহজলভ্য ও জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের এনালগ ও ডিজিটাল থার্মোমিটারের নাম ও দাম দাম কত সেটা টেবিল আকারে প্রদান করছিা। এর পরে এর দাম কিভাবে নির্ধারণ হয়, কখন কোন টাইপের থার্মোমিটার কিনতে হবে এই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা দেয়ার চেষ্টা করব।
নরমাল থার্মোমিটার, যা সাধারণত পারদ থার্মোমিটার হিসাবে পরিচিত, এর দাম প্রায় ১০৫ থেকে ১২০ টাকা।
ডিজিটাল থার্মোমিটারের দাম সাধারণত ১০০ থেকে ৪০০০ টাকার মধ্যে পরিবর্তিত হয়। দাম নির্ভর করে ব্র্যান্ড, বৈশিষ্ট্য, এবং নির্ভুলতার উপর।
ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের দাম সাধারণত ৮৯৯ থেকে ৫৭১৫ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। এটি দ্রুত এবং যোগাযোগবিহীন মাপার সুবিধা প্রদান করে।
পারদ থার্মোমিটারের দাম সাধারণত ১০৫ থেকে ১২০ টাকা। এটি ঐতিহ্যবাহী এবং ব্যবহার করা সহজ।
গরুর জ্বর মাপার থার্মোমিটারের দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। এটি পশু চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় এবং সাধারণত বড় আকারের হয়ে থাকে।
ডিজিটাল, অন্যোন্য, ইনফ্রারেড ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের থার্মোমিটারের দামের ব্যাপক পার্থক্য থাকে। প্রযুক্তি, বৈশিষ্ট্য এবং নির্ভুলতার উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারিত হয়। থার্মোমিটার মূলত দুই প্রকারের:
১. এনালগ থার্মোমিটার
এনালগ থার্মোমিটারের ভিতরে একটি বিশেষ ধরনের তরল থাকে, যেমন পারদ বা রঙিন আলকোহল। যখন তাপমাত্রা বাড়ে, তখন এই তরলটি ফুলে ওঠে এবং একটি কাচের নল বরাবর উপরে উঠতে থাকে। আর যখন তাপমাত্রা কমে, তখন তরলটি সঙ্কুচিত হয়ে নীচে নেমে আসে। একটি ভালো মানের এনালগ থার্মোমিটার আপনি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
২. ডিজিটাল থার্মোমিটার
আজকাল ডিজিটাল থার্মোমিটার বেশি ব্যবহার করা হয়। ডিজিটাল থার্মোমিটারে একটি ছোট্ট স্ক্রিন থাকে যেখানে তাপমাত্রা দেখানো হয়। এটি ব্যবহার করা আরও সহজ এবং নিরাপদ। ডিজিটাল থার্মোমিটারের দাম সাধারণত ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের থার্মোমিটারের দামের মধ্যেও পার্থক্য থাকে। জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের থার্মোমিটার সাধারণত বেশি দামে বিক্রি হয়। বিদেশী ব্র্যান্ডের থার্মোমিটারগুলি সাধারণত প্রযুক্তি এবং আমদানি ব্যয় কারণে বেশি দামে বিক্রি হয়। এছাড়া, ব্র্যান্ডের মূল্য এবং বিপণন ইত্যাদি প্রভাব ফেলে।
থার্মোমিটারের দাম তার কাজের পাশাপাশি আরো অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। যেমন, কত সঠিকভাবে তাপমাত্রা মাপতে পারে। যেগুলো খুব সঠিকভাবে তাপমাত্রা দেখায়, তাদের দাম একটু বেশি হয়। আবার, যারা তাপমাত্রা মাপার পাশাপাশি মনে রাখতে পারে, বা মোবাইল ফোনের সাথে যুক্ত হতে পারে, তাদের দামও বেশি হয়।
কোনো নির্দিষ্ট ধরনের থার্মোমিটারের চাহিদা বেশি হলে দাম বাড়তে পারে। অন্যদিকে, সরবরাহ বেশি হলে দাম কমতে পারে।
থার্মোমিটার বাছাই একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে শিশুদের বা অসুস্থ ব্যক্তির তাপমাত্রা মাপার ক্ষেত্রে। তাই, সঠিক থার্মোমিটার বাছাই করার জন্য এই নির্দেশিকাটি আপনাকে সাহায্য করবে।
সঠিকতা: থার্মোমিটারটি যেন সঠিক তাপমাত্রা দেখায়।
দ্রুত ফলাফল: বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে দ্রুত ফলাফল পাওয়া জরুরি।
সহজ ব্যবহার: থার্মোমিটারটি পরিষ্কার করা এবং ব্যবহার করা সহজ হওয়া উচিত।
সুরক্ষা: থার্মোমিটারটি বিষাক্ত বা ক্ষতিকারক হওয়া উচিত নয়।
মূল্য: আপনার বাজেটের মধ্যে থাকা একটি থার্মোমিটার বেছে নিন।
শিশুদের জন্য: ডিজিটাল বা প্যাসিফায়ার থার্মোমিটার ভালো।
বয়স্কদের জন্য: ডিজিটাল বা ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য: ডিজিটাল থার্মোমিটার সবচেয়ে জনপ্রিয়।
চিকিৎসালয়ের জন্য: ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়।
নোট: সর্বদা একটি ভালো ব্র্যান্ডের থার্মোমিটার বেছে নিন। থার্মোমিটার কেনার আগে ব্যবহার নির্দেশাবলী ভালোভাবে পড়ুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
থার্মোমিটার কিনতে চাইলে আপনার কাছের অনেক জায়গাতেই পেয়ে যাবেন। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য স্থান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো:
১. ফার্মেসি ও মেডিকেল শপ
দেশের যেকোনো ফার্মেসি বা মেডিকেল শপে থার্মোমিটার সহজেই পাওয়া যায়। তবে বিশেষ করে বড় ফার্মেসিগুলোতে বিভিন্ন মডেলের thermometer কিনতে পারবেন।
২. সুপার মার্কেট
ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগীয় শহরের সুপার মার্কেটেও বিভিন্ন্য প্রকার থার্মোমিটার পাওয়া যায়। বিশেষ করে বড় সুপার মার্কেটগুলোতে আপনি দেশি ও বিদেশী ব্রান্ডের মেডিক্যাল পন্য কিনতে পারবেন।
৩. অনলাইন শপ
বাংলাদেশের অন্যান্য অনলাইন শপ থেকেও থার্মোমিটার কিনতে পারবেন। এখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের থার্মোমিটার পাবেন এবং তুলনামুলক কম দামে কিনতে পারবেন। যেমন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ অনলাইন ফার্মেসী আরোগ্য থেকে যেকোন পণ্য সর্বনিম্ন ১০% থেকে সর্বোচ্চ ৬০% ছাড়ে ওষুধ, মেডিক্যাল ডিভাইস ইত্যাদি কিনতে পারবেন।
থার্মোমিটার কেনার আগে আপনার নিজের চাহিদা এবং বাজেট বিবেচনা করা উচিত। তবে ভালোমানের একটি জ্বর মাপার থার্মোমিটার কেনা উচিৎ। আর আপনি যদি একটি সহজ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের থার্মোমিটার খুঁজছেন, তাহলে এনালগ থার্মোমিটার আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। অন্যদিকে, আপনি যদি একটি দ্রুত, সঠিক এবং বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন থার্মোমিটার খুঁজছেন, তাহলে ডিজিটাল থার্মোমিটার আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
বি:দ্র: এই নিবন্ধে উল্লিখিত দামগুলো কেবল একটি সাধারণ ধারণা দেওয়ার জন্য। আসল দাম বিভিন্ন দোকান এবং সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।
প্রশ্ন: ডিজিটাল থার্মোমিটার এবং এনালগ থার্মোমিটারের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কি?
উত্তর: ডিজিটাল থার্মোমিটার বৈদ্যুতিক সেন্সর দ্বারা তাপমাত্রা পরিমাপ করে এবং ডিজিটাল ডিসপ্লেতে ফলাফল দেখায়। অন্যদিকে, এনালগ থার্মোমিটার পারদ বা অ্যালকোহলের মাধ্যমে তাপমাত্রা মাপে এবং ফলাফল স্কেলে প্রদর্শন করে।
প্রশ্ন: শিশুর জন্য কোন ধরনের থার্মোমিটার ব্যবহার করা উচিত?
উত্তর: শিশুদের জন্য ডিজিটাল থার্মোমিটার, বিশেষ করে কপালে রাখার ধরনের থার্মোমিটার ব্যবহার করা সুবিধাজনক এবং নিরাপদ।
প্রশ্ন: থার্মোমিটার কতক্ষণ রাখতে হয়?
উত্তর: থার্মোমিটারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময় ধরে রাখতে হবে। সাধারণত, এটি এক থেকে দুই মিনিট হতে পারে।
প্রশ্ন: থার্মোমিটার কতদিন টিকবে?
উত্তর: থার্মোমিটারের স্থায়িত্ব ব্র্যান্ড, মডেল, ব্যবহারের এবং যত্নের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে এনালগ ক্লিনিকাল থার্মোমিটার স্থায়িত্ব বেশি হয়, কারণ Mercury তার সম্প্রসারনের বিশিষ্ট আজীবন ধরে রাখে। তবে সময়ের সাথে তাপমাত্রা মাপার accuracy কমে যেতে পারে। অন্যদিকে, ডিজিটাল জ্বর মাপার ডিভাইসগুলো ৩-৬ বছর স্থায়ী হয়।
প্রশ্ন: থার্মোমিটার ব্যবহারের সময় কোন সাবধানতা গ্রহণ করা উচিত?
উত্তর: থার্মোমিটার ব্যবহারের আগে এবং পরে অবশ্যই পরিষ্কার করা, পারদ যুক্ত থার্মোমিটার সাবধানে ব্যবহার করা, এবং ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যাটারি নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।
0
0